
ইসলামি ডেস্কঃ
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন যখন মহামহিম আল্লাহ তার যাবতীয় মাখলুকের সৃষ্টি সম্পন্ন করলেন তখন রেহেম(আত্মীয়তার বন্ধন) উঠে দাড়ালো। এবং (আল্লাহ তা’আলার) কোমর ধরে নিলো (অর্থাৎ আবদারের সুরে ফরিয়াদ করলো)। তখন আল্লাহ বললেনঃ থামো, কি চাও তুমি, বল? আত্মীয়তা আরয করলোঃ এই স্থান তার, যে আপনার কাছে আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ হতে রেহাই প্রার্থনাকারী (অর্থাৎ আমি আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আপনারই মাধ্যমে সেই কাজ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, কেউ আমার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে এবং আত্মীয়তার পবিত্রতা বহাল রাখবে না)। আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ তুমি কি এই কথায় সম্মত আছ, যে ব্যক্তি তোমাকে বহাল এবং সমুন্নত রাখবে তার সাথে আমিও সদাচরণ করবো। আর যে তোমাকে ছিন্ন করবে, আমিও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবো? আত্মীয়তা আরয করলোঃ “হ্যা, আমি সম্মত আছি। আল্লাহ বললেনঃ তাহলে তোমার সাথে আমার এ ওয়াদাই রইলো (বুখারী)।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। (সুরা মুহাম্মদ আয়াতঃ ২২)।
অর্থাৎ অজ্ঞতার যুগে তোমাদের যে অবস্থা ছিল ঐ অবস্থাই তোমাদের ফিরে আসবে। তাই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আল্লাহ এদেরকেই করেন অভিশপ্ত, আর করেন বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন।
এর দ্বারা ভূ-পৃষ্ঠে বিপর্যয় সৃষ্টি ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করতে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে এবং ভূ-পৃষ্ঠে শান্তি স্থাপন করার ও আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্ত রাখার হিদায়াত করেছেন। আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্ত রাখার অর্থ হলো আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করা এবং তাদের আর্থিক সংকটের সময় তাদের উপকার করা। (তাফসিরে ইবনে কাসির)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ(সাঃ) আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আছে। আমি তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখি, কিন্তু তারা সম্পর্ক ছিন্ন করে। আমি তাদের উপকার করি, কিন্তু তারা আমার ক্ষতি করে। তারা আমার সাথে মূর্খের আচরণ করে, কিন্তু আমি তা সহ্য করি। তিনি বলেনঃ যদি তোমার বক্তব্য সঠিক হয়, তবে তুমি যেন তাদের মুখে উত্তপ্ত ছাই পুরে দিচ্ছে। তোমার কারণে তাদের দুর্ভোগ আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এরূপ করতে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী তাদের মোকাবিলায় তোমার সাথে থাকবেন (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান, মুসনাদ, আবু আওয়া নাসাঈ)।
আবু আইউব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
এক বেদুইন নবী (সাঃ)-এর এক সফরে তার সাথে সাক্ষাত করে বললো, যা আমাকে বেহেশতের নিকটবর্তী এবং দোযখের দূরবর্তী করবে তা আমাকে অবহিত করুন। তিনি বলেনঃ তুমি আল্লাহর ইবাদত করো, নামায কায়েম করো, যাকাতা দাও এবং আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুন্ন রাখো। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ)।
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,যে ব্যক্তি চায় যে, তার জীবিকা প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন তার আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখে। নবী (সাঃ) বলেছেন,কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্নকারী থাকলে তাদের উপর আল্লাহর রহমাত নাযিল হয় না।
মিকদাম ইবনে মাদীকারিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ আল্লাহ তোমাদের মায়েদের সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন, অতঃপর তোমাদের পিতাদের সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন, অতঃপর নৈকট্যের ক্রমানুসারে নিকটাত্মীয় সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন।
আবু হুরায়রা (রাঃ) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাবেলা জুমআর রাতে আমাদের এখানে এলেন এবং বললেন, আমি প্রত্যেক আত্মীয়তা ছিন্নকারীকে ভালোবাসি না। আমাদের এখানে এরূপ কেউ থাকলে সে যেন উঠে যায়। কিন্তু কেউ মজলিস থেকে উঠেনি। তিনি তিনবার একথা বললেন। এক যুবক তার ফুফুর কাছে এলো। সে তার সাথে দুই বছর যাবত সম্পর্ক ছিন্ন করে রেখেছিল। সে তার নিকট প্রবেশ করলে সে তাকে জিজ্ঞাসা করলো, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! তুমি কেন এসেছো? যুবক বললো, আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে এরূপ এরূপ বলতে শুনেছি। সে বললো, তুমি তার কাছে ফিরে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করো, তিনি কেন এরূপ বলেন? তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ আদম সন্তানের আমলসমূহ আল্লাহর কাছে প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পেশ করা হয়। কিন্তু আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্নকারীর আমল কবুল হয় না।
জুবাইর ইবনে মুতইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না (মুসলিম)।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তোমরা তোমাদের নসবনামা জেনে রাখো, তোমাদের আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখো। কেননা দূরাত্মীয়ও সম্পর্কের কারণে নিকটতর হয়ে যায় এবং নিকটাত্মীয়ও সম্পর্কের অভাবে দূরে চলে যায়। প্রতিটি রক্তের বন্ধন কিয়ামতের দিন তার সংশ্লিষ্ট জনের সামনে আসবে এবং সে যদি তাকে দুনিয়ায় যুক্ত রাখে, তবে সে তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। কিন্তু সে যদি তাকে দুনিয়ায় ছিন্ন করে থাকে, তবে সে তার বিরুদ্ধে সম্পর্ক ছিন্নের সাক্ষ্য দিবে (হাকিম)।
হাকীম ইবনে হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
হাকীম ইবনে হিযাম (রাঃ) নবী করিম (সাঃ)-কে বলেন, আমি জাহিলী যুগে যেসব কাজ করেছি আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার, দাসমুক্তি এবং দান-খয়রাত ইত্যাদি, তার কোন প্রতিদান আমি পাবো কি? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তোমার পূর্ববর্তী পুণ্যসমূহসহ তুমি মুসলমান হয়েছো।
জুবাইর ইবনে মুতইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে মিম্বারের উপর বলতে শুনেছেন, তোমাদের বংশ পরিচিতি (নসবনামা) জেনে রাখো, অতঃপর আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখো। আল্লাহর শপথ! ঘটনাক্রমে কোন ব্যক্তি ও তার ভাইয়ের মধ্যে কিছু ঘটে যায়। যদি সে জানতে পারতো যে, তার এবং অপরজনের মধ্যে রক্তের বন্ধন রয়েছে তাহলে তা তাকে তার ভাইকে অপদস্থ করা থেকে বিরত রাখতো (তিরমিযী, তাবারানী)।
/ধর্ম বিষয়/বেলাল হোসেন /