
নির্বিচারে গাছ কাটা ও বন উজাড়ের ফলে দেশে খরা ও মরুময়তার ঝুঁকি বাড়ছে। খরার কারণে ভবিষ্যতে ফসলের উৎপাদন ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। খরা ও মরুময়তা রুখতে তাই বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন কার্যক্রম বাড়াতে হবে। এজন্য সরকার থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে আলোচকরা এসব কথা বলেন। ‘উষ্ণায়ন, খরা ও মরুকরণরোধে ভূমি ও জলাশয় রক্ষার এখনই সময়’ শীর্ষক সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রসহ (ক্যাপস) ১৬টি পরিবেশবাদী সংগঠন। সেমিনারে সভাপতিত্বে করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুল হামিদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জলবায়ু সংসদের সভাপতি ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তানভীর শাকিল জয় পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিকের বিকল্প খোঁজার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি কাজের বিপরীতমুখি চিন্তা করেই উন্নয়নের দিকে এগোতে হবে।
শুধু সরকারের পক্ষে এটা সম্ভব নয়,সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবেশকে সংরক্ষণ করেই আমাদের চিন্তা করতে হবে কিভাবে নতুন কিছু অর্জন করা যায়।’
সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। তিনি বলেন, ‘২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ১৭ ভাগ এলাকা সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশে প্রায় ১৩-১৪টি জেলায় খরা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আগামী ২০ থেকে ২৫ বছরে উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ- এসব এলাকা মরুভূমির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠতে পারে। এই ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, খরা ও মরুময়তা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করতে হবে এবং বনায়ন কার্যক্রম বাড়াতে হবে।’
বাপার সহ সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গে কোথা থেকে কাজ শুরু করতে হবে তাও চিহ্নিত করতে হবে।
ব্যক্তি থেকে সরকার পর্যন্ত সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। সরকারকে আরও শক্ত করে ক্ষমতা প্রয়োগ করে কথা বলতে হবে। সেই সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরকে আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে বাপার যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রসুল বলেন, আমরা ১২ লাখ গাছ কেটেছি এক বছরে। উষ্ণায়ন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ এটি। ফলে দাবদাহ শুরু হয়েছে ও কৃষি সভ্যতায় আঘাত হেনেছে।
বাপা’র সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জলবায়ু সংসদের সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলাম, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) প্রোগ্রাম ম্যানেজার সানজিদা খান রিপাসহ পরিবেশবাদী সংস্থার প্রতিনিধিরা।