
একটি শিক্ষানীয় গল্প
এক তোতা পাখির উপদেশ।
বাগদাত শহরে এক সওদাগর ছিল সে তার বাড়িতে এক লোহার খাঁচার ভিতরে একটি তোতা পাখি বন্দি করে রাখতো। তোতাটি তার খুব অতি আদরের ও শখের ছিল। সওদাগর তোতাটিকে লৌহ_পিঞ্জরে আবদ্ধ রেখে আদর যত্নে পুষত। পাখিটি কিন্তু সর্বদাই পিঞ্জর_মুক্ত হয়ে স্বাধীন জীবনে ফিরে যেতে সচেষ্ট ছিল,যা বন্যপাখির সাধারণ স্বভাব। একবার সওদাগর বাড়ির চাকর বাকর ও সব লোক জনকে ডেকে বল্লো আমি ভারতবর্ষে (হিন্দুস্তানে) বাণিজ্য সফরে যাব। তোমাদের কার কি জিনিস লাগবে বল সফর থেকে ফিরার সময় নিয়ে আসব। সবাই সব জিনিসের কথা আবদার করল সওদাগর সবার কথা মেনে নিল,তার পর সওদাগর তার অতি আদরের বন্দি পোষা তোতার কাছে গিয়ে প্রশ্ন করল এই তোতা আমিতো হিন্দুস্তানে বাণিজ্য করতে যাচ্ছি তোর জন্য কি কিছু আনতে হবে তখন তোতাটি বোল্ল হুজুর আমিতো মানুষ নই আমার জন্য পোশাক পাতি ও সোনাদানা অলংকার কিছুই আনতে হবে না।তোতাটি বোল্ল হুজুর আপনি যদি আমার একটা কথা রাখেন তাহলে আমার একটা চাওয়ার আছে। সওদাগর সাহেব বল্লেন বলো দেখি তোমার কি কথা তখন তোতাটি বোল্ল হুজুর ভারতবর্ষে (হিন্দুস্তানে) আমার জাতীয় অনেক তোতাপাখি আছে, আপনি সেই দেশে যদি কোন তোতা পাখির দেখা পান তাহলে প্রথমে আমার সালাম জানিয়ে বলবেন যে, আমার বাড়িতে লৌহ_পিঞ্জর খাঁচার ভিতরে তোমাদের জাতীয় এক তোতা পাখি বন্দি আছে,সে খুব কষ্টে বন্দি জীবন কাটাচ্ছে আর তোমরা আনন্দে খুলা মুক্ত বাতাসে বিচরণ করে ঘুরে বেড়াচ্ছ। সে ঐ বন্দি জীবন থেকে কিভাবে মুক্তি পাবে তোমাদের কাছে জানতে চেয়েছে। এটাই আমার একমাত্র অভিলাষ,আপনি দয়া করে আমার এ কাজটা করে আসবেন এটাই আমার চাওয়া।তার পর সওদাগর চলে গেলেন ভারত বর্ষের হিন্দুস্তানে। ছয় মাস ভরে সে বাণিজ্যের কাজ শেষ করলেন, এবং যে যাহা কিছু জিনিস পাতি নিতে বলেছিল সবার জন্য সব কিছু কিনে নিলেন তারপর জাহাজের দিকে রওনা হলেন চলতে,চলতে ক্লান্ত হয়ে পরলেন।
পথের মধ্যে এক গাছের ছায়ায় বিছরাম করার জন্য বসে পরলেন,কিছুখন পর এক ঝাঁক তোতা পাখি এসে ঐ গাছের ডালে বসে পরল তোতা পাখির ঝাঁক দেখে তার বাড়ির তোতাটির কথা মনে পরলো সওদাগরের। তখন সে ঐ তোতা গুলোকে বলতে লাগলো হে তোতাপাখির দল তোমরা মনোযোগ দিয়ে শোন, আমার বাড়িতে লোহার খাঁচায় একটি তোমাদের জাতীয় তোতা পাখি বন্দি আছে সে তোমাদেরকে সালাম জানিয়েছে, সেই তোতা পাখিটি কিভাবে ঐ লৌহ_পিঞ্জর থেকে মুক্তি পাবে তোমাদের কাছে জানার জন্য উপদেশ চেয়েছে। বৃক্ষের তোতাগুলো সওদাগরের পিঞ্জরে আবদ্ধ তোতার জীবন বৃত্তান্ত শুনে হঠাৎ করে তাদের মধ্যে থেকে একটি তোতা ছঁটপঁট করে মাটিতে পড়ে মৃতবৎ হয়ে গেল। সওদাগর এ দৃশ্য দেকে খুবই মর্মাহত হয়ে গেলেন। সওদাগর বাড়ি পৌঁছালে তার পোষা তোতাটি তাকে নিজের আবেদনের কথা জানতে চাইলেন। তোতাটি বলল,অধমের সওগাত কোথায়?কি দেখেছেন, কি বলেছেন তারা দয়া করে আমাকে বলুন। সওদাগর বলল,সে ঘটনা আমি বলব না।আমি নিজেই লজ্জিত এবং নিজেই নিজের আঙ্গুল কামড়াছি, কেন আমি বোকামি করে ওইরুপ বেহুদা সংবাদ পৌঁছালাম, তোতাটি বলল,হে আমার মনিব,কি কারনে আপনার এত লজ্জা,এত ক্রোধ এবং ভাবনা সেটাই বলুন। সওদাগর ভীষণ অনুতাপ_আফসোসের সাথে পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করে বলল তোমার বন্দি জীবনের কথা শুনে একটি তোতা গাছের ডাল থেকে মাটিতে পরে কলিজা ফেটে ছটপট করতে করতে সঙ্গে সঙ্গে মারা গেলেন। একথা শুনা মাত্র পিঞ্জরের ভিতরে তোতাটি ছটপট করতে করতে সঙ্গে সঙ্গে মারা গেল। এ ঘটনা দেখে সওদাগরের আর আক্ষেপের সীমা থাকলনা। অবশেষে সওদাগর তার মরা তোতাটি পিঞ্জর থেকে বাইরে ফেলে দিলেন।
বস্তুতঃ তোতাটি মরেনি,মরার ভান ধরেছিল মাত্র। পিঞ্জর থেকে বাইরে ফেলামাত্র সেটি উড়ে গিয়ে এক বৃক্ষের ডালে বসল। সওদাগর অবাক হয়ে গেলেন! তোতাটি বৃক্ষের উপর থেকে বলল,ভারতের ঘটনায়ও বস্তুতঃ সে তোতাটি মরেনি বরং মরার ভান ধরেছিল মাত্র। আমার পিঞ্জরে আবদ্ধ থাকার সংবাদ পেয়ে সেটি আমাকে উপদেশ দিয়েছিল,পিঞ্জর_থেকে মুক্ত হইতে চাইলে তার একমাত্র কৌশল হচ্ছে,তুমিও আমার মত মরার আগেই মরে যাও,তাহলে তুমি অবিলম্বে মুক্তি পেয়ে যাবে, তা নাহলে মুক্তি পাবেনা। আপনার মুখে ঘটনার বৃত্তান্ত শুনতে পেয়ে আমি আমার স্বজাতীয় ভারতীয় তোতার উপদেশের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে সে অনুযায়ী কাজ করেছি ছটপট করে মরার আগেই মরে গেছি, আমি মরার ভান না করলে আপনি আমাকে মুক্তি দিতেননা। ভারতের তোতাটির সে উপদেশ আমার জন্য লক্ষ্যভেদকারী অভ্রষ্ট তীরতুল্য ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে,আমি আজ মুক্ত। বিদায়কালে তোতাটি তার দীর্ঘ দিনের মালিক সওদাগরকে উপদেশ দিয়ে গেল,হুজুর ভারতের তোতাটিও মরেনি সে আমাকে বুঝিয়েছে যে যদি তুই বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেতে চাশ তাহলে আমার মত ছটপট করে মরে যা তাই আমি তার উপদেশ বুঝতে পেরে ছিলাম একারনে আমি মরে বেছে গেছি। আপনিও যদি মরার আগে মরে যেতে পারেন,তবে দুনিয়ার মায়া,মোহ, পিঞ্জর থেকে মুক্তিলাভ করতে পারবেন। সওদাগরকে উপদেশ দিয়ে তোতাটি বিদায় বলে সানন্দে উড়ে চলে গেল। তোতার উপদেশ শুনে সওদাগর মনে মনে ভাবল,আমি কি একটি পাখি থেকেও তুচ্ছ। আমিকি মুক্তির কৌশল অবলম্বন করতে পারবনা। তাই বিশ্ব বিক্ষাত মাওলানা জালাল উদ্দীন রুমি তার মসনবি শরিফে লিখেছেন,মুক্তির পথে যে সাধনা করবে সেইতো ধন্য।
/ডেইলি কুড়িগ্রাম /বেলাল হোসেন/